নিউজ

ফকির লালন সাইজির পরম্পরা সাধু-ফকির-বাউল দের সাথে ঘটে যাওয়া গুরুত্তপূর্ণ ঘটনাবলি নিয়ে খবর এখানে প্রচার করা হবে।  

 

ইতিহাসের নিরানন্দময় দোল উৎসব পালিত

২৯ শে ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ই মার্চ ২০২৫, জয়ন্ত হাওলাদারঃ ফকির লালন সাঁই জীবিত থাকা অবস্থায় ছেউড়িয়া আখড়া বাড়িতে নিয়মিত দোল উৎসবে সাধু সঙ্গের আয়োজন করতেন। এই তথ্য ১৮৯০ সালের হিতকারী পত্রিকা মারফত সকলেরই জানা আছে। কিন্তু এই বছর ১৩ই মার্চ বা ২৮ শে ফাল্গুন দোল উৎসব আর সেই ভাবে পালন করা হয় নাই লালন ভক্ত সাধু ফকিরদের। বিগত ১৫০ বছরেরও আগে থেকে যে অনুষ্ঠান বা আয়োজন এই দোল উৎসব ঘিরে ছেউড়িয়া আখড়াতে পালন করা হয়ে আসছে সেই আয়োজন কেন এবার হলো না, সে প্রশ্ন সকল লালন ভক্ত ও অনুরাগীদের মনে!

বাংলাদেশের বর্তমান পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতার কারনে এই উৎসব এর সঠিক আয়োজন করা সম্ভব হয় নাই এমনটাই মনে করেন বেশির ভাগ লালন ভক্ত ও অনুরাগী। লালন সাঁই ঘরানার দীক্ষিত ভক্ত রেজা ফকিরের মতে এইবার দোল উৎসবে সাধু সঙ্গে ৫০ ভাগ সাধু ফকির ও ২০ ভাগ পাগলের সমাগম ঘটেছে বিগত দিনের সাধু সঙ্গের তুলনায়। রেজা ফকির বিগত ৩৫ বৎসর যাবত এই সাধু সঙ্গে আসেন এবং ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত থাকতেন। এবার এক রাত থেকে পরদিন সবাই চলে যায়! যেখানে বিগত দিনে ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত সাধু ফকির ও পাগলেরা ছেউড়িয়া আখড়াতে থাকতেন। ফকির লালন সাঁই নিজে ৩ দিন ব্যাপি সঙ্গ করতেন দোল পূর্ণিমায়।

গত কয়েক দশকে লালন একাডেমী ছেউড়িয়া লালন আখড়াতে প্রতি বছর দুই বার সাধু সঙ্গের আয়োজন করে থাকে দোল পূর্ণিমায় ও ১লা কার্ত্তিক লালন সাঁই এর তিরোধান দিবস উপলক্ষে। পদাধিকার বলে কুষ্টিয়া জেলার প্রশাসক (ডি সি) লালন একাডেমীর সভাপতি থাকার কারনে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় বিগত দিনগুলাতে এই সকল সাধু সঙ্গ আয়োজিত হয়ে থাকে। এবার তাঁর ব্যতিক্রম ঘটে নাই। তবে এবার ব্যতিক্রম হয়েছে আয়োজনে! এবারে প্রশাসন থেকে নির্দেশনা ছিল কোন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না করার। সাধু সঙ্গের নিয়ম আনুসারে সাধু –ফকিরদের ২৪ ঘণ্টায় তিন বেলা সেবা প্রদানের রীতি থাকলেও এবার রাতে দুই বার সেবা দেবার ঘোষণা দেয়া হয় প্রশাসন থেকে যদিও বরাবরের মত এবারও সরকারি অর্থ সহযোগিতা করা হয়। সাধু সঙ্গের নিয়ম অনুসারে বাল্য সেবা সকালে ও পূর্ণ সেবা দুপুরে হয়ে থাকে কিন্তু এবার সেই সেবা রাতে দেয়া হয়। কিন্তু সাধু-ফকির কম হবার কারনে রাতে সেবা দেবার পরেও অনেক খাবার অতিরিক্ত থেকে যায় সেই কারনে সাধু-ফকিরদের সহযোগিতায় লালন একাডেমীর আয়োজক স্থানীয় জনগন দুপুরে পূর্ণ সেবার আয়োজন করে প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে।

জনৈক সাধুর মতে বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা লালন ফকির ঘরনার দীক্ষিত ভক্ত হয়েও যদি এই করুন অবস্থা হয়ে তাহলে ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে দেখার বিষয়। লালন ফকির বাংলার সর্বাধিক জনপ্রিয় সাধক। তাঁর ভক্ত সংখ্যা অগুনিত। প্রতি বৎসর দোল পূর্ণিমা ও ১লা কার্ত্তিকের সাধু সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়ে থাকে ছেউড়িয়া গ্রামে লালন সাঁই এর আখড়া বাড়িতে। এই গ্রাম সহ আশেপাশে অসংখ্য মানুষ অপেক্ষা করে থাকে এই উৎসবের জন্য। বহু লোকের অর্থনৈতিক আবার অনেকের সামাজিক কর্মকাণ্ড নির্ভর করে এই উৎসবকে ঘিরে। কিন্তু এবার কারো আশাই পূর্ণ হয় নাই সেটা নিয়ে স্থানীয় মানুষদের ভিতর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।  

কুষ্টিয়ার একজন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ি ও লালন ভক্ত গত ৪৫ বৎসর যাবত ছেউড়িয়াতে লালন সাইজির আখড়ার পাসে প্রতিদিন কিছু সময় সাধু সঙ্গ করেন তাঁর মতে “দেশ বিবস্ত্র হয়ে গেছে, দেশের গায়ে বস্ত্র নাই” তাই এমন অবস্থা হয়েছে। জনৈক দীক্ষিত লালন ভক্তের বলেছেন গত ৩০ বৎসরে ছেউড়িয়াতে এরকম অবস্থা তিনি দেখেন নাই।  

তবে এবার যে সকল সাধু-ভক্ত-ফকির-দরবেশ-পাগল দোল পূর্ণিমায় ১ দিনের জন্য ছেউড়িয়াতে গিয়াছিলেন তারা শান্তিতে চলাফেরা করতে পেরেছেন লোকসমাগম কম হওয়ার কারনে। এছাড়া দোকানপাট ও পণ্যসম্ভার নিয়ে মেলাও আয়োজন করা হয় নাই সেই কারনেও একটু মানুষ কম হয়েছে। মেলার কারনে লোকসমাগম বেসি হয় যা গত কয়েক বৎসর যাবত সাধু-ভক্ত-ফকির-দরবেশ-পাগল দের স্বাভাবিক চলাফেরার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। অনেকদিন যাবত সাধু-ভক্ত-ফকির-দরবেশ-পাগল দের দাবি ছিল মেলার যায়গা অন্য কোথাও সরিয়ে সাইজির আখড়ার চারিদিকে শুধুমাত্র সাধু সঙ্গের জন্য ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা হোক।